Tuesday 10 May 2016

টুং টাঙের টিউটোরিয়াল

টুং টাঙের টিউটোরিয়াল

ব্যাপারটা কী?

যদি জিজ্ঞাসা করি কোন ধরণের গান সারা বিশ্বে সর্বকালে সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়, তবে হয়তো অনেকেই ধন্দে পড়ে যাবে ৷ কিন্তু এর অতি সহজ উত্তর হল--গুন্ গুন্ করে গান! বাসে-ট্রামে-ট্রেনে-খনিতে এমন কি নাৎসী ক্যাম্পেও গুন্ গুন্ করে গান গাইবার লোকের অভাব হয় না ৷ এর জন্য কেউ কাউকে পয়সা দেয় না, এমন কি একজনের গুনগুনানিতে অন্যেরা অনেক সময়ে বিরক্তও হয়, তবু মানুষ নিজের আনন্দে নিতান্ত হেঁড়ে গলাতেও গুন্ গুন্ করে থাকে ৷

কন্ঠ সঙ্গীতের জগতে যেমন গুন্‌‌গুনানি, তেমনি যন্ত্রসঙ্গীতের জগতে হল টুংটাং করা ৷ হাতের কাছে একটা গীটার আছে, অমনি ইচ্ছা করে তারগুলোয় একটু টংকার করে শব্দ করি ৷ হার্মোনিয়মের রীড টিপে প্যাঁ পোঁ আওয়াজ করি, পাশের বাড়ির ছেলেটার মাউথ অর্গানে ফুঁ মেরে দেখি সুর বেরোয় কিনা ৷ দুঃখের কথা অধিকাংশ সময়েই যেটা বেরোয় সেটার সঙ্গে সুরের চেয়ে অসুরের মিলই বেশী ৷ টুংটাঙের সঙ্গে গুন্‌‌গুনাণির এই একটা মস্ত তফাৎ ৷ নিজের গুন্ গুনানি নিজের কানে সাধারণতঃ ভালোই শোনায়, কিন্তু নিজের টুংটাঙের শব্দ নিজের কানেই এমন বেসুরো ঠেকে যে তাড়াতাড়ি চারদিকে চেয়ে দেখি--কেউ শুনে ফেলল কিনা!

এই নিয়ে প্রাণে ভারী দুঃখ ছিল ৷ ওস্তাদ গায়ক হতে চাই নে, নিজের মনে গুন্ গুন্ করেই আমি খুশী ৷ তেমনি ওস্তাদ বাজিয়ে হবারও সাধ নেই, খালি যদি সহজ কোনো যন্ত্রে টুং টাং করে সুর তুলতে পারতাম ৷ একবার একটি ছেলেকে দেখেছিলাম, সে পাতা দিয়ে কি করে একটা ভেঁপু বানিয়ে তাতে দিব্যি সুন্দর একটা মেঠো সুর বাজিয়ে শুনিয়েছিল ৷ সত্যি বলব, মনে মনে Einstein হতে যতটা ইচ্ছে হয়েছে, তার চেয়েও অনেক বেশী ইচ্ছে হয়েছে এই কৌশলটা রপ্ত করতে ৷ ভেঁপু বানানোটা ততটা নয়, অনায়াসে একটা সহজ সুর বাজাতে পারার অশিক্ষিতপটুত্বকে মনে মনে ঈর্ষা করেছি ৷

বিভিন্ন সময়ে অনেকের সান্নিধ্যে এসেছি যারা একেকটা যন্ত্র ভালো বাজাতে পারে ৷ তারা ওস্তাদ, কিন্তু সেই চট্ করে টুং টাং করতে পারার রহস্য কেউই বলতে পারে নি ৷ ৷ মনের বাসনা এদের কাছে ব্যক্ত করতে গেলে অনুকম্পার হাসি হেসেছে--যেন আমি বহুবছরের আয়াস-সাধ্য ধন ফাঁকি দিয়ে মেরে দেবার চেষ্টা করছি ৷

মজার কথা হল টুং টাং করার একটা সহজ কায়দা কিন্তু সত্যিই আছে ৷ যে কায়দা জানলে অনেক যন্ত্র থেকেই নিজের ইচ্ছে মত সুর বার করা সম্ভব ৷ সেটা শেখানোই এই ''টুং টাঙের টিউটোরিয়ালের'' উদ্দেশ্য ৷

টুং টাঙের মূল কথা

যে কোনো বাজনারই মূল উদ্দেশ্য হল শ্রুতিমধুর শব্দ উৎপাদন ৷ শ্রুতিমধুর শব্দ আমাদের চারধারে বিস্তর হয়ে চলেছে--পাখীর ডাক, ঝরণার শব্দ ইত্যাদি ৷ কিন্তু সাধারণতঃ কোনো বাজনাই এই সব শব্দের অনুকরণ করে না ৷ যে ধরণের শব্দকে অনুকরণ করতে গিয়ে বিভিন্ন সুরেলা যন্ত্রের উৎপত্তি সেটা হল মানুষের কন্ঠস্বর ৷ মানুষের কানে মানুষের গলাটা বড়ই মধুর শোনায় ৷ এবং যে কোনো বাজনার পিছনেই মূল অনুপ্রেরণা হল আমাদের কন্ঠস্বর ৷ আমরা সবাই প্রচুর কথা বলে থাকি, এবং কথার মাধ্যমে ভাবপ্রকাশ করাটা আমাদের পক্ষে খুবই সহজ ৷ এই অতি পরিচিত অভ্যাসটার সঙ্গে বাজানোর যোগসূত্রটা বুঝতে পারলেই টুং টাং করাটা অতি সহজে আসে ৷ এই যোগসূত্রটা কি বোঝা যাক ৷

আমরা কথা বলতে গিয়ে শব্দ করি ৷ এই শব্দটা দু রকমের ৷ এক, যখন আমরা একটা নতুন আওয়াজ শুরু করি, এবং দুই, যখন একটা আওয়াজকে টানতে থাকি ৷ একটা উদাহরণ নিই ৷ ধরো তুমি বলছ
''আমি ভাত খাই''৷
তুমি এই কথাটাই বলার চেষ্টা কর মুখ বন্ধ করে, কেবল হুঁ হুঁ শব্দ করে ৷ ঠিক যেমন করে আমরা কোনো গানের কথা ভুলে গেলে খালি হুঁ হুঁ করে সুরটা ভাঁজতে থাকি--
''এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ হুঁ!''
কয়েকবার ''আমি ভাত খাই'' বাক্যটা এইরকম হুঁ হুঁ করে বল ৷ লক্ষ কর যে তুমি সব সময়েই ''আ''-তে একবার হুঁ করছ, ''মি''-তে আরেকবার, ''ভা''-তে তৃতীয়বার, এবং ''খা''-তে শেষবার ৷ এখানে প্রত্যেকটা হুঁ হল আওয়াজের শুরু ৷ তার মানে আওয়াজের শুরুগুলো হল
আ মি ভা খা৷
বাদ রইল ভাত-এর ত এবং খাই-এর ই ৷ এরা হচ্ছে আওয়াজকে টেনে নিয়ে যাওয়ার উদাহরণ ৷ তার মানে এখানে আওয়াজের চারটে খণ্ড আছে, যাদেরকে আমরা এইভাবে দেখাতে পারি--
মি ভাত খাই
আরেকটা বাক্য দেখি--''আমি বাড়ি যাই৷'' এটাকেও হুঁ হুঁ করে বলার চেষ্টা কর ৷ লক্ষ করবে যে এখানে আওয়াজের শুরুগুলো হল
আ মি বা ড়ি যা ৷
খালি যাই-এর ই-টাতে আওয়াজকে টেনে যাওয়া হচ্ছে ৷ সুতরাং এখানে পাচ্ছি পাঁচটা খণ্ড--
মি বা ড়ি যাই
যাকে আমরা আওয়াজের শুরু বললাম, তাকে বোধহয় ভদ্র ভাষায় স্বরাঘাত বা শ্বাসাঘাত জাতীয় কিছু একটা বলে ৷ ইংরাজীতে syllable বলে যে ব্যাপারটা আছে সেটা বোধহয় আমরা যাকে আওয়াজের খণ্ড বললাম সেটারই আরেকটা নাম৷ তবে ঠিক জোর দিয়ে বলতে পারব না ৷

এই বার একটা গানের লাইন নিয়ে একই কাজ করা যাক ৷ হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের এই গানটা সবাই শুনেছে--
''আমি গান গাই, তোমাদের অনুরোধে যে গান করেছি শুরু কেমনে করব সারা সে তো জানা নাই৷''
এর মধ্যে ''আমি গান গাই'' অংশটা প্রথমে নিতান্ত গদ্যময়ভাবে বল, ঠিক যেমন করে ''আমি ভাত খাই'' বলে ৷ যদি হুঁ হুঁ করে বলার চেষ্টা কর তবে দেখবে এখানেও আওয়াজের খণ্ডগুলো একেবারেই ''আমি ভাত খাই''-এর মতই--
মি গান গাই
এবার গানটা সুর দিয়ে গাও ৷ হুঁ হুঁ করে সুর ভাঁজার মত করে ৷ লক্ষকরবে যে যতই সুর দাও না কেন, আওয়াজের খণ্ডগুলো কিন্তু একটুও বদলাচ্ছে না! বস্তুতঃ চাইলে তুমি অতি বিটকেল কোনো সুরেও গেয়ে দেখার চেষ্টা করতে পারো, কিন্তু যতই যা কর না কেন, আওয়াজের খণ্ডগুলো বদলানো অসম্ভব! তাই বলতে পারো যে যেকোনো গানেরই মূল কাঠামোটা আসে মানুষের প্রতিদিনের বলা কথার ভঙ্গী থেকে ৷ তার জন্য একটুও গান বা পিয়ানো, তবলা কি তানপুরা কিচ্ছু জানতে হয় না!

সুতরাং যখনই কোনো গানের লাইন টুং টাং করে বাজাতে চাইবে, প্রথম ধাপটা হবে লাইনটা নিতান্ত গদ্যময়ভাবে বলা, এবং তারপর সেটাকে হুঁ হুঁ করে বলার চেষ্টা করা ৷ এ থেকে তুমি আওয়াজের খণ্ডগুলো পেয়ে যাবে ৷ কয়েকটা উদাহরণ দেখি ৷ ধরো বাজাতে চাও ''কফি হাউসের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই৷'' হুঁ হুঁ করলেই বুঝবে আওয়াজের খণ্ডগুলো এইরকম--
ফি হাউ সের সেই আড্ ডা টা আজ আর নেই

যদি বলি ''পুরাণো সেই দিনের কথা'' তবে হবে
পু রা ণো সেই দি নের থা
যদি খুব দাঁতভাঙা উদাহরণ নিতে চাও, যেমন ''অজ্ঞানতিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জনশলাকয়া'', তবে পাবে
অগ্ গা তি মি রান্ ধস্ জ্ঞা নান্ লা য়া

কি যন্ত্র

এই বার এই প্রত্যেকটা আওয়াজের খণ্ডে সুর লাগিয়ে টুং টাং করতে হবে ৷ সেটা কি করে করতে হবে সেটা নির্ভর করছে তুমি কি যন্ত্রে বাজাচ্ছ তার উপরে ৷ যদি হার্মোনিয়াম, বা পিয়ানো বা সিন্থেসাইজার জাতীয় কী-বোর্ডে বাজাও, তবে মনে রাখবে যে এই যন্ত্রগুলো কেবলমাত্র আওয়াজের শুরুগুলোই বাজাতে পারে, টানতে পারে না (যদিও আঙুলের আলতো চাপে এমন শ্রুতিবিভ্রম ঘটানো সম্ভব, যাতে মনে হয় যেন একই আওয়াজকে ইনিয়ে বিনিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তবে টুং টাং করার জন্য সেই সব সূক্ষ্ম কায়দা লাগবে না) ৷ যদি হাওয়াইয়ান গীটারে বাজাতে চাও, তবে জানবে যে প্রত্যেকবার তারটাকে আঙুল দিয়ে টানলে নতুন আওয়াজের শুরু হয়, এবং স্টীলটাকে তারের উপর বোলালে একই আওয়াজ টেনে চলতে থাকে ৷ অন্যান্য যন্ত্রের ক্ষেত্রেও একইরকম ব্যপার হওয়া উচিত, যদিও কোনো দিন বাজিয়ে দেখি নি, তাই ঠিক জানি না ৷ যদি বেহালা জাতীয় ছড়ের বাজনা হয়, তবে বোধহয় যখনই ছড়ের গতির অভিমুখ নতুন করে শুরু হবে (মানে টানা শুরু হবে বা ঠেলা শুরু হবে) তখনই নতুন আওয়াজের শুরু ৷ ছড়টা যতক্ষণ একইদিকে টানতে থাকবে ততক্ষণ একই আওয়াজ ইনিয়ে বিনিয়ে চলতে থাকবে ৷ অবশ্য এটা আমার অনুমান মাত্র ৷

আমরা এখানে কী-বোর্ড ব্যবহার করে বোঝাব ৷ তার প্রধান কারণ হল এতে আওয়াজের শুরুগুলো নিয়ে মাথা ঘামালেই চলবে (যে সব গানে একই আওয়াজকে অনেকক্ষণ টেনে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপার আছে, সেগুলো অবশ্য কী বোর্ডের টুং টাং দিয়ে ভালো উঠবে না) ৷ তবে বহু গানই চমৎকার শোনাবে ৷ দ্বিতীয় কারণ হল কী-বোর্ড খুব সস্তায় পাওয়া যায় ৷ কলকাতায় ফড়িয়াপুকুরে বাচ্চাদের বেশ কয়েকটা খেলনার দোকান আছে, সেখানে এক ধরণের made in China খেলনা কী বোর্ড পাওয়া যায়, সাড়ে তিনশো টাকা দাম (এটা 2015-এর কথা), তাতে টুং টাঙের কাজ দিব্যি চলে ৷ ভেবো না যেন এটা ফড়িয়াপুকুরের দোকানগুলোর কিংবা ওই কী-বোর্ড কোম্পানির বিজ্ঞাপন৷ আগেভাগেই বলে দিই যে এই কী-বোর্ডের আওয়াজ ভীষণ শ্রুতিসুখকর কিছু নয়, তবে আমাদের কাজ চলার পক্ষে যথেষ্ট৷ জনৈক উৎসাহী বন্ধু সম্প্রতি virtualpiano.net নামের একটি website-এর কথা জানিয়েছেন, সেখানে একটি online piano আছে, যেটা কম্পিউটারের কী-বোর্ড টিপেই দিব্যি বাজানো যায়, এবং তার জন্য কোনো পয়সাও লাগে না৷ হাতের কাছে অন্য পথ না থাকলে সেই বিনাপয়সার বীণা দিয়েই শুরু করতে পারো৷
একটা সস্তা কী-বোর্ড
ধরা যাক তোমার হাতে এখন দুটো জিনিস--এক, কোনো একটা পরিচিত গানের লাইন যেটা তুমি বাজাতে চাও, আর দুই, একটা কী-বোর্ড ৷ প্রথমেই তুমি গানের লাইনটাকে হুঁ হুঁ করে গেয়ে ছোটো ছোটো আওয়াজের খণ্ডে ভেঙে নেবে ৷ এরপর খালি বাকি থাকে একটাই জিনিস-- প্রত্যেকটা খণ্ডের জন্য কোন রীডটা টিপতে হবে, এবং টিপে কতক্ষণ ধরে রাখতে হবে ৷ এদের মধ্যে দ্বিতীয়টা তুমি কানে শুনেই অনায়াসে বুঝতে পারবে ৷ কিন্তু কোন খণ্ডের জন্য কোন রীডটা টিপতে হবে সেটা বলে না দিলে বার করা সহজ নাও হতে পারে ৷ একটা উদাহরণ নিয়ে দেখি ৷ ধরো এই লাইনটা
''মুক্তির মন্দির সোপানতলে কত প্রাণ্ হল বলিদান্''
কিভাবে প্রাণ না লিখে প্রাণ্ লিখেছি লক্ষ কর ৷ কিন্তু মন্দির্ লিখিনি ৷ এতেই বোঝা যাচ্ছে যে এখানে মন্দির উচ্চারণ হবে মন্দির-অ ৷ যাই হোক, এই লাইনটা আশা করি তুমি বহুবার শুনেছ, তাই উচ্চারণগুলো ভালো করেই জানো ৷ আওয়াজের খণ্ডে ভেঙে নিলে হবে
মুক্ তি মন্ দি সো পা লে প্রাণ্ লি দান্

কী-বোর্ডের সঙ্গে প্রথম পরিচয়

কখন কোন রীডটা টিপতে হবে সেটা বোঝানোর জন্য রীডগুলোর নামকরণ করে নিলে সুবিধা হবে ৷ নানাভাবে এই কাজ করা যায় ৷ কেউ a,b,c ইত্যাদি অক্ষর দিয়ে নাম দিতে ভালোবাসেন, কেউ লেখেন do, re, mi ইত্যাদি নাম ৷ তবে আমরা ভারতীয়রা ব্যবহার করি সা রে গা মা পা ধা নি নামগুলো৷ এক্ষুণি যে কী-বোর্ডের ছবিটা দিয়েছি সেটার দিকে তাকালেই দেখবে যে কালো রীডগুলো দুই এবং তিনের দলে সাজানো৷ এরকম একটা দুয়ের দল এবং একটা তিনের দল, এবং তাদের গায় লেগে থাকা সাদা রীডগুলোকে একত্রে বলে একটা সপ্তক৷ নীচের ছবিটা দেখলে ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে৷
সাদা রীডদের নাম
কী-বোর্ডের মঝামাঝি জায়গায় যে সপ্তকটা আছে সেটা দ্যাখো৷ এর মধ্যে সবচেয়ে বাঁদিকের সাদা রীডটাকে বলব সা৷ তার ডানদিকের সাদাটার নাম রে, ইত্যাদি৷ সুতরাং এইভাবে কী-বোর্ডের মাঝামাঝি জায়গায় যে সপ্তকটা আছে তার সবগুলো সাদা রীডের নাম দেওয়া হল৷ এর ডানদিকের সপ্তকের সাদা রীডগুলোরও একই নাম, খালি মাথায় একটা করে রেফ্ থাকবে ৷ বাঁদিকের সপ্তকের বেলায় রেফের বদলে হসন্ত (ছবিতে কমা দিয়ে বুঝিয়েছি) ৷ কালো রীডগুলোর নাম দেওয়া হয় এইভাবে--
কালো রীডদের নাম
সুতরাং আমরা কোথায় কোন রীড টিপতে হবে সেটা এইভাবে লিখে দিতে পারি--
‌‌গাগাগা‌‌গাগাগামাগারেসানি,
মুক্তিমন্দিসোপালে
এটা হল স্বরলিপি

এইভাবে লিখে বোঝানোর একটা অসুবিধা হল পড়বার সময়ে মাথা গুলিয়ে যায়৷ রীডগুলোর নামও অক্ষর দিয়ে, আবার গানের কথাগুলোও অক্ষর দিয়ে, যেমন ''সোপানতলে''-এর ''পা''-এর জন্য ''গা'' টিপতে হবে৷ প্রথম প্রথম ভুল করে ''পা'' রীডটা টিপে দেবার প্রবণতা আসে৷ দ্বিতীয় সমস্যাটা হল খালি একরাশ অক্ষরের স্তূপ দেখে সুরের ওঠানামা আন্দাজ করা যায় না, ফলে মনে রাখাটা সহজ হয় না৷ সেই কারণে অনেকে আরেকটা notation ব্যবহার করে, যেটাতে পুরো সুরটা ছবি এঁকে প্রকাশ করা হয়৷ বোঝার সুবিধার জন্য প্রথমে কী-বোর্ডটাকে বাঁদিকের মার্জিনে খাড়া করে আঁকব, আর কয়েকটা লম্বা লাইন টেনে নেব ৷ এবার গানের কথাগুলোকে উঠিয়ে নামিয়ে লিখব, এইভাবে-
তবে এভাবে আঁকাটা বেশ কঠিন ৷ তাই আরেকটু সহজ করব এইভাবে ৷ বাঁদিকের কী-বোর্ডটা আর কষ্ট করে আঁকব না ৷ খালি একটা বিশেষ চিহ্ন এঁকে দেব--
ডানদিক আর বাঁদিকের ছবিদুটোর মানে একই
এইভাবে যে notation-টা পাব তাকে বলে staff notation. এই notation-এর অবশ্য আরও অনেক খুঁটিনাটি আছে, যেগুলো টুং টাং করার জন্য প্রয়োজন হবে না৷ আমাদের উদাহরণে জিনিসটা দাঁড়াচ্ছে এইরকম-

বাজাব কি করে?

এই কাজটা খুবই সহজ৷ প্রথমে ভালো করে দেখে নাও যে প্রথম ছয়বার একই রীড টিপতে হবে, তার পর ''সোপানতলে''-র গোড়ায় একঘর ডানদিকে সরে পরপর বাঁদিকে যেতে হবে৷ এইবার যেমন যেমন রীড টিপবে মুখে গানের সেই অংশের কথাটুকু বলবে, ফিস্ ফিস্ করে নয়, জোরে জোরে স্পষ্ট উচ্চারণে, যাতে তুমি নিজে স্পষ্ট শুনতে পাও৷ বার কয়েক বাজালেই বুঝবে যে গানের অতি পরিচিত সুরটাই তোমার হাত থেকে বেরোচ্ছে!

আর কি বাজানো যায়?

বাজানোর জন্য গানের অভাব নেই ৷ তবে সহজ গান দিয়ে শুরু করাই ভালো ৷ এই ধরো একটা লাইন--
এখানে একটা নতুন চিহ্ন আছে, ছোটো হাতের b-এর মত দেখতে৷ ওই চিহ্নটা না থাকলে যে রীডটা টিপতে, ওই চিহ্নটা থাকার ফলে টিপবে তার বাঁদিকের কালো রীডটা ৷ একে ইংরাজীতে বলে flat, আর বাংলায় বলে ''কোমল'' ৷

যদি স্বরলিপি দিয়ে লিখতাম তবে হত
র্সানির্সাপাপামাপানির্সা
রেভাইফাগুনলেগেছেনেনে

এক গুচ্ছ গানের টুং টাং সুর

এই সুরগুলো জোগাড় করেছি দুই জায়গা থেকে--এক, সুভাষ চৌধুরী সংকলিত 'মুক্তির গান' নামের দুই খণ্ড বই থেকে, আর দুই, স্বরবিতান থেকে ৷ স্বরবিতানের scan করা পাতাগুলো পেয়েছি http://www.geetabitan.com থেকে ৷ এই সব জায়গায় সুরগুলো অবশ্য অনেক বেশী সূক্ষ্মভাবে দেওয়া আছে ৷ টুং টাঙের জন্য অত সূক্ষ্ম কারুকার্যের দরকার নেই ৷ তাই সে সব ছেঁটে বাদ দিয়েছি ৷ প্রত্যেকটা সুরই বাজালে চমৎকার চিনতে পারা যায় ৷
  1. বলো বলো বলো সবে
  2. বঙ্গ আমার জননী আমার
  3. ও আমার দেশের মাটি [প্রথম পাতা | দ্বিতীয় পাতা]
  4. দুই হাতে কালের মন্দিরা যে
  5. এক দিন যারা মেরেছিল তাঁরে গিয়ে
  6. ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে
  7. কথা কোস নে লো রাই
  8. মম চিত্তে নিতি নৃত্যে
  9. মুক্তির মন্দিরসোপানতলে
  10. আমি প্রণমি তোমারে চলিব নাথ
  11. প্রাণ চায়, চক্ষু না চায়
  12. সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে
  13. এসো শ্যামলসুন্দর
  14. তোমার খোলা হাওয়া
  15. বিপদে মোরে রক্ষা করো
  16. ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে
  17. আমার মল্লিকাবনে
  18. ও জোনাকি
  19. আধেকঘুমে নয়ন চুমে (প্রথম পাতা)
  20. আধেকঘুমে নয়ন চুমে (দ্বিতীয় পাতা)
  21. আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে (প্রথম পাতা)
  22. আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে (দ্বিতীয় পাতা)
  23. আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে (তৃতীয় পাতা)
  24. আকাশ আমায় ভরল আলোয় (প্রথম পাতা)
  25. আকাশ আমায় ভরল আলোয় (দ্বিতীয় পাতা)
  26. আমি যার নূপুরের ছন্দ (প্রথম পাতা)
  27. আমি যার নূপুরের ছন্দ (দ্বিতীয় পাতা)
  28. আমরা অদ্ভুত
  29. আমরা দুজনা (প্রথম পাতা)
  30. আমরা দুজনা (দ্বিতীয় পাতা)
  31. আমরা দুজনা (তৃতীয় পাতা)
  32. বঙ্গ আমার জননী আমার
  33. ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা (প্রথম পাতা)
  34. ব্যর্থ প্রাণের আবর্জনা (দ্বিতীয় পাতা)
  35. চৈত্রপবনে মম চিত্তবনে
  36. ও আমার ছোট্টো পাখি চন্দনা
  37. চক্ষে আমরা তৃষ্ণা
  38. চোখ গেল চোখ গেল কেন ডাকিস রে
  39. দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় (প্রথম পাতা)
  40. দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায় (দ্বিতীয় পাতা)
  41. ডীপ নিভিয়াছে ঝড়ে
  42. দূরদ্বীপবাসিনী
  43. একদিন যারা মেরেছিল তাঁরে গিয়ে
  44. ঘুম ঘুম চাঁদ
  45. হরেকৃষ্ণ নাম দিল প্রিয় বলরাম
  46. হাট্টিমাটিম
  47. ঝড় উঠেছে বাউল বাতাস
  48. আমি কান পেতে রই (প্রথম পাতা)
  49. আমি কান পেতে রই (দ্বিতীয় পাতা)
  50. কৃষ্ণচূড়া আগুন তুমি
  51. সব লোকে কয় লালন কী জাত
  52. মেঘের কোলে রোদ হেসেছে (প্রথম পাতা)
  53. মেঘের কোলে রোদ হেসেছে (দ্বিতীয় পাতা)
  54. নাচ ময়ূরী নাচ রে
  55. ও আকাশ সোনা সোনা
  56. আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি (প্রথম পাতা)
  57. আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি (দ্বিতীয় পাতা)
  58. আমি পথভোলা এক পথিক এসেছি (তৃতীয় পাতা)
  59. ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে
  60. প্রজাপতি প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই
  61. আমি প্রণমি তোমারে
  62. আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে (প্রথম পাতা)
  63. আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে (দ্বিতীয় পাতা)
  64. পুরানো সেই দিনের কথা
  65. সংকোচের বিহ্বলতা (প্রথম পাতা)
  66. সংকোচের বিহ্বলতা (দ্বিতীয় পাতা)


Tuesday 20 August 2013

অর্ণব চক্রবর্তীর গল্প

আওয়াজ

একটা আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল৷

--খস্‌‌খস্!

গাঢ় অন্ধকার৷ চোখ চলে না৷ মনে করতে পারিনা কিছুক্ষণ কোথায় আছি৷ বিছানায় শুয়ে আছি এটুকু বুঝতে পারি৷ আধা উপুড় হয়ে৷ নিথর হয়ে কান পেতে থাকি--

--খস্‌‌খস্ খস্ খস্!

নাঃ শোনার ভুল নয়৷ খুব জোরে নয়৷ মৃদু কিন্তু সুস্পষ্ট৷ ডান হাতের আঙুলে কি যেন একটা স্পর্শ হচ্ছে৷ মনোযোগ দিয়ে বোঝার চেষ্টা করি কি সেটা৷ এক তাড়া কাগজ, একটা ফাইলের কোনা৷ আমি বিছানায় শুয়ে আছি, একটা খোলা ফাইলের পাশে--

হ্যাঁ, মনে পড়েছে আমি কোথায়৷ জায়গাটার নাম কাভালুর, ব্যাঙ্গালোরের কাছে৷ এখানে ভারতীয় জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থার একটা মানমন্দির আছে৷ আমি সেখানে এসেছি একটা {\rm seminar}-এ৷ গতকাল দিনের বেলায় আমার প্রথম লেকচার ছিল, কাল আরেকটা৷ আজ রাতে ওদের ক্যাম্পাসের গেষ্ট হাউসে রয়েছি৷

আমি এখনও অনড় হয়ে শুয়ে আছি৷ কিন্তু মাথাটা এখন পুরো সাফ হয়ে গিয়েছে৷ কিন্তু তবু একটা অনির্দেশ্য ভয় যেন ষষ্ঠেন্দ্রিয়কে জাগিয়ে তুলেছে, নড়তে দিচ্ছে না৷ প্রতিটা শব্দ কান খাড়া করে শুনছি৷ ফ্যানের শব্দ৷ পুরোণো ফ্যান৷ একটা চাপা ঝিঁঝির শব্দ৷ জানালায় ভারী পর্দা, বাইরের কোনো আলো বা শব্দ ঢোকা কঠিন৷

--খস্‌‌খস্৷ খস্‌‌স্‌‌স্--

এবার যেন শব্দটা কিছু বেশীক্ষণ স্থায়ী হল৷ আওয়াজটা হচ্ছে আমার পায়ের দিক থেকে, ঘরের কোনায়, মেঝের কাছে৷ শব্দটার উৎসটা কল্পনা করার চেষ্টা করি৷ মেঝেতে জায়গায় জায়গায় নারকেলের ছোবড়ার মাদুর পাতা আছে৷ সেই মাদুরের গায় কিছু ঘষ্‌‌টে এগোলেই এরকম শব্দ সম্ভব৷

এই কথাটা মনে হওয়ামাত্রই একটা ঠান্ডা স্রোত খেলে গেল শিরদাঁড়া বেয়ে৷ জায়গাটা ঘন বনের মধ্যে একটা অনুচ্চ পাহাড়ের উপরে৷ শুনেছি চারধারের জঙ্গলে বন্যজন্তু আছে৷ পুরো ক্যাম্পাস যে বৈদ্যুতিক তারে ঘেরা সেটা দেখিয়েছিলেন উদ্যোক্তারাই৷

'কি আছে ওই জঙ্গলে?' নিছক কৌতূহলে জিজ্ঞাসা করেছিলাম৷

'এক সময়ে নাকি চিতাবাঘ ছিল,' তাচ্ছিল্যভরে বলেছিলেন আমার পথপ্রদর্শিকা, 'তবে এখন ওসব কিছু নেই, বোধহয় কিছু বুনো শুয়োর-টুয়োর আছে৷ তবে মাঝে মাঝে হাতির উপদ্রব হয়৷ কিন্তু সে কালে ভদ্রে৷ তবে যেটার ভয় সবচেয়ে বেশী, সেটা হল সাপ৷' ওই প্রাণীটিকে বৈদ্যুতিক তারে আটকে রাখা কঠিন৷ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় বড় বড় গর্ত দেখিয়ে বলেছিলেন বেশ কিছু রোমহর্ষক গল্প৷ রাতের বেলা সাপের উপদ্রব বেশী৷ মানমন্দিরের কাজে ব্যাঘাত হবার ভয়ে এখানে সন্ধ্যা থেকেই নিষ্প্রদীপ অবস্থা চলে৷ তখন চলার পথে সাবধান৷ টর্চ ছাড়া বেরোবেন না, আর শোবার আগে ঘরের কোনাগুলো ভালো করে দেখে নেবেন৷

তখন চোখ বড় বড় করে মাথা নেড়েছিলাম৷

কিন্তু গতরাতে শোবার আগে কোনাগুলো সত্যই দেখে শুয়েছিলাম কি?

আমার প্রতিটি স্নায়ু এখন অত্যন্ত সজাগ হয়ে উঠেছে৷ মনশ্চক্ষে সাপটার গতিবিধি আন্দাজ করার চেষ্টা করছি৷ আওয়াজটা অনেকক্ষণ হচ্ছে না৷ সেটা ভালো কথা নয়৷ হয়তো সাপটা নারকেল ছোবড়ার মাদুর পার করে মসৃণগতিতে এখন মেঝের উপর দিয়ে গড়িয়ে খাটের দিকে আসছে৷ হয়তো বা পায়া বেয়ে উঠছে৷ আমি সম্পূর্ণ অনড় হয়ে থাকি৷ শুনেছি সাপ খুব বোকা হয়৷ গায়ের উপর দিয়ে চলে গেলেও বোঝেনা৷ খালি নড়তে দেখলেই ছোবল মারে৷

--খস্‌‌খস্!

ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ল৷ আওয়াজটা একই কোনা থেকে আসছে৷ তার মানে সাপটা অন্ততঃ খাটের খুব কাছে নেই৷ অন্ততঃ ওই সাপটা নেই৷ ঘরে আরো কতগুলো কিলবিল করছে কে জানে! কিন্তু এভাবে ভাবলে মানসিক দৌর্বল্য বাড়বে বই কমবে না৷ মাথা ঠান্ডা রেখে ঘরের ভূগোলটা এঁকে নেবার চেষ্টা করি মনে মনে৷

ঘরটা নিরন্ধ্র অন্ধকার৷ গতকাল শোবার আগে যেটুকু দেখেছিলাম সেই স্মৃতিই ভরসা৷ ঘরে দুটো ছোটো খাট ছিল মনে আছে৷ মাঝে মিটারখানেক ফাঁক৷ সেখানেও মেঝেতে খানিকটা ছোবড়ার মাদুর পাতা৷ দরজা দিয়ে ঢুকেই যে খাটটা তার উপরে আমি আমার ব্যাগ এবং জামাকাপড় ডাঁই করে রেখেছিলাম শোবার আগে৷ জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখার অভ্যাস আমার নেই৷ তাছাড়া প্রথম দিনের ক্লান্তির পর ঘর গোছানো নিয়ে মাথা ঘামাইনি৷ বিশেষতঃ একটা ফাঁকা খাট যখন আছেই৷ খালি এই দিকের খাটটায় একটা ফাইল নিয়ে শুয়ে পড়েছি৷ কি কি আছে এই বিছানায় হাতের কাছে? বালিশ নেই, ও বস্তুটা আমি ব্যবহার করি না৷ তাই দুটো বালিশই পাশের খাটে৷ অবশ্য বিষধর সাপের বিরুদ্ধে বালিশ যে খুব যুৎসই অস্ত্র এমন বলা যায় না৷ একটা পাতলা কম্বল আছে, সেটা বরং সাপের উদ্যত ফণার উপর চাপা দেওয়ার পক্ষে ভালো৷ আর আছে ফাইলটা৷ কিন্তু টর্চটা কোথায়? স্পষ্ট মনে আছে ব্যাগ থেকে বার করেছি গতরাতে৷ তারপর ওটা রেখেছিলাম {\rm CD}-র বাক্সের উপর সেটাও স্পষ্ট স্মরণ হচ্ছে৷ কিন্তু সেটা ছিল ওই খাটে৷ এই খাটে তো শোবার সময়ে ফাইল ছাড়া কিছুই ছিল না হাতে৷ তার মানে টর্চটা পড়ে আছে পাশের খাটেই৷ মাত্র মিটারখানেক দূরে৷ আমার খাট থেকে মেঝেতে খালি এক পা ফেলে হাত বাড়ালেই পেয়ে যাব৷ হয়তো বা একটু হাতড়াতে হবে৷ কিন্তু সেটা বড় কথা নয়৷ বড় কথা হচ্ছে একটা পা মেঝেতে রাখা৷ যে মেঝেতে ঘুরে বেড়াচ্ছে অজানা সরীসৃপ৷

আওয়াজটা অনেকক্ষণ হচ্ছে না৷ তাতে দুশ্চিন্তা আরো বাড়ছে৷ আওয়াজটা থেকে শত্রুপক্ষের গতিবিধি আন্দাজ করা যায়৷ মেঝের অল্প অংশই মাদুরে ঢাকা৷ অবশিষ্ট উন্মুক্ত অংশ খাটের চতুর্দিকেই ছড়িয়ে আছে৷ কান খাড়া করে থাকতে থাকতে কান ব্যথা হয়ে যাচ্ছে৷ একটা আলো চাই৷ ফণা তোলা উদ্যত রূপ যতই ভয়ংকর হোক, অদৃশ্য শত্রুর চেয়ে অন্ততঃ ভালো৷ টর্চ অবধি পৌঁছনো যাবে না৷ ঘরের লাইটের সুইচটা কোথায় ছিল? মনে মনে সারা ঘরের দেওয়ালটা হাতড়ে দেখি৷ নাঃ, মনে পড়ছে না৷ তবে বাথরুমের সুইচটা কোথায় সেটা অবশ্য মনে আছে৷ আমার খাটের মাথার দিকে বাথরুমের দরজা, তার পাশেই দেয়ালে বাথরুমের সুইচ৷ সুতরাং একলাফে উঠে ওই সুইচটা একবার অন করে দিতে পারলেই হয়৷ কিন্তু সমস্যা একটাই৷ আমার খাটের মাথা থেকে সুইচের মধ্যে অন্ততঃ দেড়মিটার ফারাক৷ এবং ওই খানে কোনো মাদুর নেই৷ সাপটার অনেকক্ষণ কোনো আওয়াজ পাচ্ছি না৷ তার মানে ওটা আপাততঃ কোনো মাদুরবিহীন অংশেই রয়েছে৷ অতএব?

--খস্‌‌খস্!

কি আশ্চর্য, সাপটা এখনও সেই একই কোনায় রয়েছে! কিন্তু আশ্চর্য হয়ে সময় নষ্ট করার অবস্থায় আমি নেই৷ এই সুবর্ণ সুযোগ! আমি একলাফে খাটের মাথার দিক দিয়ে নেমে পড়ি, ঝড়ের বেগে দেয়াল হাতড়ে সুইচ টিপে দিই৷ বাথরুমের আধখোলা দরজা দিয়ে বাল্বের হলুদ রঙের আলো ছড়িয়ে পড়ল ঘরে৷ আমার এক পা এখনও খাটের প্রান্তে৷ অন্য পা মেঝেতে৷ এক হাত সুইচে৷ না, আমার পায়ের ধারেকাছে অন্ততঃ কোনো বিপজ্জনক সরীসৃপ চোখে পড়ছে না৷ কিন্তু শব্দটা যে কোনা থেকে আসছিল সেটা খাটের ওই দিকে, এখনও আমার চোখের আড়ালে৷ শব্দটা আপাততঃ হচ্ছে না৷ হঠাৎ আলোয় আমার শত্রুপক্ষের চোখ ধাঁধিয়ে গেছে হয়তো৷ হয় তো ঠাহর করার চেষ্টা করছে কোন দিক দিয়ে আক্রমণ করা যায়৷ আমার বর্তমান অবস্থান থেকেই সারা ঘরটা নিরীক্ষণ করে নিই৷ এই রকম কোনা থেকে ঘরটা দেখি নি আগে৷ খাটের একেবারে নীচে দেয়ালের কাছে একটা ওয়েষ্ট পেপার বাস্কেট চোখে পড়ল৷ গতরাতে একটা বিস্কুটের প্লাষ্টিক ফেলার জন্য একটা ওয়েষ্ট পেপার বাস্কেটের দরকার ছিল৷ শ্রীমান বিছানার তলায় এমন গভীরে সেঁধিয়ে ছিলেন যে তখন প্রয়োজনের সময়ে খুঁজে পাই নি৷ কিন্তু ওয়েষ্ট পেপার বাস্কেট আবিস্কার করেই ক্ষান্ত দিতে পারি না৷ তার চেয়ে অনেক গুরুতর জিনিস অপেক্ষা করছে খাটের ওইপ্রান্তে, যে প্রান্তটা এখনও আমার চোখের আড়ালে৷ অতি সন্তর্পনে পা টিপে টিপে বিছানায় উঠি, পাছে খাটের তলা দিয়ে ছুটে এসে ছোবল দেয় পায়৷ তারপর বিছানার চাদরটা বাগিয়ে নিই এক হাতে৷ ফণা তুললেই দেব চাপা দিয়ে৷ তারপর স্তব্ধনিঃশ্বাসে উঁকি মারি সেই রহস্যময় প্রান্তে৷

কিন্তু নাঃ, কোনো আশ্চর্য সরীসৃপ নেই সেখানে৷ সত্যি বলতে কি কিছুই নেই৷ খালি একটা ছোটো গর্ত আছে দেয়ালে৷ ওটার ভিতরেই কি সেঁধিয়েছে সাপটা? সন্তর্পনে খাটের নীচে তাকাই৷ সেখানেও কিছুমাত্র নেই৷ বিস্ময়ে বিমূঢ় হব কি না ভাবছি, এমন সময়ে--

আবার 'খস্‌‌খস্!'

ঝটিতে বিছানার চাদর হাতে তুলে নিয়ে সেই রহস্যময় কোনার দিকে তাকাই৷ এক মুহূর্ত আগেও ভেবেছিলাম ওখানে কিছুই নেই৷ এবার বুঝলাম কিছু একটা আছে--

নারকেলছোবড়ার মাদুরের উপর ফ্যানের হাওয়ায় বিস্কুটের পরিত্যক্ত প্লাস্টিক যে অমন খস্‌‌খস্ শব্দ করে কে জানত?

Tuesday 11 June 2013